মুকেশ আম্বানি পরিবারের কার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
মুকেশ আম্বানি পরিবারের কার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
মুকেশ আম্বানির বাবার নাম ছিল ধিরাজলাল হীরাচাঁদ আম্বানি, যিনি সবার কাছে ধিরুভাই আম্বানি নামে পরিচিত। তার বাবা হীরাচাঁদ স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তবে ধিরুভাইয়ের পড়ালেখা উচ্চ মাধ্যমিকের পর আগায়নি।
ইনকামের জন্য ইয়েমেনে কয়েক বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে শুরুতে পণ্য আমদানি এবং পরে রিলায়েন্স গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নিজের মতো সন্তানদের পরিণতি হয়নি কারো। অর্থাভাবে কারো পড়ালেখা আটকে থাকার কারণ ছিল না।
পরিবারের তিন সন্তান কেবল নন, তারা যাদেরকে বিয়ে করেছেন, তারাও বিদ্যায় বুদ্ধিতে অর্থকড়িতে অনন্য। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচ্চ শিক্ষায় খরচ হয়েছে দেদার অর্থ। সবার উচ্চ মাধ্যমিক ভারতে হলেও উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কেউ কেউ সেই পাট চুকিয়ে গেছেন লন্ডনেও। এরপর সবাই ফিরে এসেছেন নিজ দেশে।
ধিরুভাইয়ের ছোট ছেলে মুকেশ আম্বানি ছোট থেকেই পড়ালেখায় ছিলেন উজ্জ্বল। মুম্বাইয়ের হিল গ্রেঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে তিনি ভর্তি হন মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এরপর মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাস করেন। পরে উড়ে যান সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনা করেন এমবিএ নিয়ে।
১৯৮০ সালে রিলায়েন্সে যোগ দেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান ব্যবসায় কাজে লাগিয়ে আজ তিনি ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। তার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আজ পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিযোগাযোগ, রিটেইলসহ বিভিন্ন খাতে সারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপের একটি। অনেক পরিবার আছে যেগুলো সম্পদে বড় হলেও বিদ্যার দৌড় সীমিত। তবে আম্বানি পরিবার কিন্তু এমন নয়।
মুকেশের স্ত্রী নীতা আম্বানিও বহু গুণে গুণান্বিত। মুম্বাইয়ের নরসি মনজি কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিকস থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি আছে তার। কর্মজীবনের শুরুর দিকে শিক্ষকতা দিয়ে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও আছে তার পদচারণা। তিনি একজন প্রশিক্ষিত ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী। জনহিতকর কাজ এবং শিক্ষা ও খেলাধুলায় আছে আগ্রহ।
এই দম্পতির তিন সন্তান। সবচেয়ে বড় সন্তান আকাশ আম্বানির পড়াশোনার শুরু মুম্বাইয়ে তার দাদার নামে করা ধীরুভাই আম্বানি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর উচ্চশিক্ষা নেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে। পড়াশোনা করেন অর্থনীতি নিয়ে।
আকাশের জমজ বোনের নাম ইশা আম্বানি। তিনিও ধীরুভাই আম্বানি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে উড়ে যান আমেরিকায়। মনোবিজ্ঞান ও সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করেন সেখানকার ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে। পরে এমবিএ করেন একই দেশের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। যার বিয়ে নিয়ে তোলপাড়, সেই অনন্ত আম্বানির পড়ালেখাও শুরু দাদার নামে স্থাপন করা স্কুলে। পরে উচ্চশিক্ষা নিতে বড় ভাই বোনের মতোই উড়ে যান মার্কিন মুল্লুকে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে।
আম্বানি দম্পতির সন্তানরা যাদেরকে বিয়ে করেছেন, সেই পরিবারগুলোও ধনকুবের। পাশাপাশি শিক্ষা দীক্ষা, জ্ঞান গরিমায়ও এগিয়ে। বড় ছেলে আকাশ আম্বানির স্ত্রীর নাম শ্লোকা মেহতা। তিনি হীরা ব্যবসায়ী রাসেল মেহতার মেয়ে । তাঁরা বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। শ্লোকার উচ্চশিক্ষাও যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে। এরপর আইন বিষয়ে আরেকটি ডিগ্রি নেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে। আম্বানি দম্পতির জামাতা আনন্দ পিরামল ও ইশা আম্বানি পড়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিষয়ে। তারা বিয়ে করেন ২০১৮ সাল ।
অনন্ত যাকে বিয়ে করেছেন, সেই রাধিকা মার্চেন্ট ভারতের আরেকটি বিজনেস টাইকুন পরিবারের সন্তান। তার বাবার নাম বীরেন মার্চেন্ট, মায়ের নাম শায়লা মার্চেন্ট। রাধিকার পড়াশোনার শুরু মুম্বাইয়ের ক্যাথেড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে। পরে ভর্তি হন ইকোল মন্ডিয়াল ওয়ার্ল্ড স্কুলে। উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। বিষয় রাজনীতি ও অর্থনীতি। শাশুড়ির মতো রাধিকাও একজন ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী।
COMMENTS